অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : শীতকাল মানে হাড়কাঁপুনে কনকনে ঠান্ডা। আর মায়ের হাতে বানানো হরেক রকমের পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম। এজন্য একসময় তীব্র শীতের মাঝেও খেঁজুরের রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত থাকতেন গাছিরা। গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান মানুষের বাড়িঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমেই খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমেছে বরিশালের আগৈলঝাড়াসহ পার্শ¦বর্তী উপজেলাগুলোতে। গত কয়েক বছর আগেও শীতকালে এসব এলাকার গাছিরা খেঁজুর গাছের রস সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তারা খেঁজুরের রস ও পাটালী বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে গত দু’তিন বছর ধরে তা ক্রমশ: বিলুপ্ত হতে চলেছে। খেঁজুরের রস দিয়ে শীত মৌসুমে পিঠা-পায়েস তৈরির প্রচলন থাকলেও শীতকালীন খেঁজুর গাছের রস এখন দুষ্প্রাপ্য বস্তু হয়ে পরেছে।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণ খেঁজুর গাছ থাকলেও সঠিকভাবে তার পরিচর্যা না হওয়ায়, নতুন করে গাছের চারা রোপণ না করায় এবং গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেঁজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া এক শ্রেণীর অসাধু ইটভাটার ব্যবসায়ীরা জ্বালানি হিসেবে খেঁজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেঁজুর গাছের সংখ্যা। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও শীতের শুরুতেই উপজেলার সর্বত্র পেশাদার খেঁজুর গাছির চরম সংকট পরে। তার পরেও কয়েকটি এলাকায় শখের বশে গাছিরা নামেমাত্র খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ওইসব গাছিরা সকাল-বিকেল দু’বেলা রস সংগ্রহ করছেন। প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘণ কুয়াশার চাদর, হেমন্তের শেষে শীতের আগমণের বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের। এসময় মৌসুমী খেঁজুর রস দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হত শীতের আমেজ। শীত যত বাড়ত খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়ত। শীতের সাথে রয়েছে খেঁজুর রসের এক অপূর্ব যোগাযোগ। এসময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হতো পিঠা-পায়েস, গুড়-পাটালী তৈরীর ধুম। গ্রামে গ্রামে খেঁজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলেন গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালী গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যেতো। খেঁজুর রসের পায়েস, রসে ভেজা পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের তো কোন জুড়িই ছিলোনা। কিন্তু কালের বির্ততনে প্রকৃতি থেকে আজ খেঁজুরের রস একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে।
সূত্রমতে, প্রাচীণ বাংলার ঐতিহ্যমন্ডিত খেঁজুর গাছ আর গুড়ের জন্য একসময় এ অঞ্চল বিখ্যাত ছিল। অনেকে শখের বশে খেঁজুর গাছকে মধুবৃক্ষ বলতেন। ওইসময় শীতের মৌসুমে খেঁজুর রসের নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠত গ্রামীণ জনপদ। খেঁজুর রস দিয়ে গৃহবধূদের সুস্বাদু পায়েস, বিভিন্ন ধরণের রসালো পিঠা তৈরির ধুম পরত। রসনার তৃপ্তিতে খেঁজুরের নলেন গুড়ের পাটালীর কোন জুড়ি ছিলনা। গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা খেঁজুর রস না খেলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যেত। কিন্তু ইটভাটার আগ্রাসনের কারণে আগের তুলনায় খেঁজুর গাছের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ইটভাটায় খেঁজুর গাছ পোড়ানো আইনত: নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ইটভাটার মালিকেরা সবকিছু ম্যানেজ করে ধ্বংস করে চলেছে খেঁজুর গাছ। গত কয়েক বছর ধরে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেঁজুর গাছকে ব্যবহার করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুত খেঁজুর গাছ ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে এ জনপদের মানুষ এখন খেঁজুর রসের মজার মজার খাবার অনেকটাই হারাতে বসছে। শখের বশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছিরা বলেন, আগের মত খেঁজুর গাছ না থাকায় এখন আর সেই রমরমা অবস্থা নেই। ফলে শীতকাল এলেই অযতেœ-অবহেলায় পরে থাকা গ্রামীণ জনপদের খেঁজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। বর্তমানে এসব অঞ্চলে প্রতি হাঁড়ি খেঁজুর রস এক থেকে দেড়শ’ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাও চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তারা আরো বলেন, খেঁজুর গাছ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে খেঁজুর গাছ আর শীতের মৌসুমে খেঁজুর গাছের রস শুধু উপনাস্যের গল্পে পরিণত হবে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ খেঁজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেঁজুর গাছের অস্তিত্ব। আর সেজন্য যথাযথভাবে পরিবেশ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ইটভাটাসহ যেকোন বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে খেঁজুর গাছ রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগ থেকেও কৃষকদের খেঁজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পার্শ্বে, পরিত্যক্ত স্থানে কৃষকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেঁজুর গাছ রোপন করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেঁজুরের রস ও গুড় সম্পর্কে কোন গল্পকথা বলতে হবেনা।
আগৈলঝাড়ায় ঔষধ ভেবে কীটনাশক পান করায় বৃদ্ধার মৃত্যু
অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ঔষধ ভেবে কীটনাশক পান করায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার গৈলা বড়ইতলা গ্রামের মৃত আইউব আলী আকনের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৬৫) মঙ্গলবার বিকেলে গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে প্রেসার উঠলে বাড়িতে এসে প্রেসারের ঔষধ ভেবে ইঁদুরের ঔষধ খেয়ে ফেলে। এসময় বাড়িতে পরিবারের কোন সদস্য উপস্থিত ছিল না। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওইদিনই চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যায়। লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
আগৈলঝাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে মারধর
অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়ার এক মৎস্য ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অচেতন অবস্থায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার গৈলা গ্রামের মৃত শিশুরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে মৎস্য ব্যবসায়ী সঞ্জয় বাড়ৈ বাগেরহাটের ফকিরহাট তার ভাইয়ের বাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে গত সোমবার বিকেলে বটতলা থেকে দুর্বৃত্তরা তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে অচেতন অবস্থায় কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া নামক স্থানে রাতে ফেলে রাখে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সঞ্জয়ের জ্ঞান ফিরে এলে বাড়িঘরের ঠিকানা বললে তার বাড়ির লোকজন তাকে আগৈলঝাড়ায় নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
অপূর্ব লাল সরকার
প্রতিনিধি,
আগৈলঝাড়া, বরিশাল।
মোবাইল- ০১৭১২-৬৪৯২৬৯, ০১৯১২-৩৪৬৪৮৪,
০১৬২৬-৫৩০২৭৭।
ই-মেইল: হবংি.ধষংধৎশবৎ@মসধরষ.পড়স